Wednesday, March 11, 2015

একটি কার্যকর দিনের জন্য ৭ টি লক্ষ্য- সূরা আল-ফাতিহা

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় ভাই ও বোনেরা,

আশা করি আল্লাহর রহমতে সবাই ভালো আছেন। আমরা সকলেই চাই আমাদের জীবনের প্রতিটি দিন হোক কার্যকর। খোঁজার চেষ্টা করি কোথায় আমাদের লাভ, কিসে আমাদের উন্নতি। শেখার চেষ্টা করি আমাদের জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান উপকরণ অর্থাৎ সময়কে কীভাবে কাজে লাগানো যায়। এজন্য আমরা লক্ষ্য স্থির করি এবং নিজেদের দক্ষতার উন্নতি ঘটানোর চেষ্টা করি, যাতে লক্ষ্য পূরণ করতে পারি।

এখন প্রশ্ন হল, এই লক্ষ্যগুলো কী আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে আমাদের জন্য সহায়ক? কিংবা আমাদের কোন ধরনের লক্ষ্য স্থির করা উচিত যেগুলো আমাদের প্রতিদিন আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের পাশাপাশি একটি কার্য্যকর দিন পেতে সহায়তা করবে এবং ইনশা আল্লাহ ধীরে ধীরে নিয়ে যাবে জান্নাতের দিকে?

সুবহান আল্লাহ! মহান আল্লাহ নিজেই আমাদের জন্য এর উত্তর দিয়ে দিয়েছেন কুরআনের ৭ টি ছোট্ট আয়াতের মাধ্যমে, যার নামকরণ করা হয়েছে- আল-ফাতিহা- ভূমিকা
 
সূরা আল-ফাতিহা

 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
আসুন কথা না বাড়িয়ে জানার চেষ্টা সেই ৭ টি লক্ষ্য সম্পর্কেঃ

১. যে কোন কাজের শুরুতে বিসমিল্লাহ বলুনঃ

শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।
[সূরা আল-ফাতিহাঃ ০১]

আপনার দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি কাজ শুরু করুন আল্লাহর নামে। এতে আপনার প্রতিটি কাজ হবে বরকতময় ও সফল। এ ব্যাপারে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, প্রতিটি  গুরুত্বপূর্ণ কাজ যাতে আল্লাহর নাম স্মরণ করা হয় না তার বরকত কমে যায়[১]

২. প্রতিনিয়ত আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করুনঃ

যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহ তাআলার যিনি সকল সৃষ্টি জগতের পালনকর্তা।
[সূরা আল-ফাতিহাঃ ০২]

একজন প্রকৃত মুসলিম সর্বাবস্থায় আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকে। সে অত্যন্ত সুচারুরূপে তার চারপাশ অবলোকন করে এবং প্রতিনিয়ত তার প্রতি আল্লাহর রহমতের জন্য শুকরিয়া আদায় করে। আর এই অভ্যাসটির চর্চা যে কোন আঘাতমূলক পরিস্থিতির সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে সহায়তা করবে এবং একটি চাপমূক্ত জীবন যাপনের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দিবে।

৩. সহানুভূতিশীল ও দয়ালু হোনঃ

যিনি নিতান্ত মেহেরবান ও দয়ালু।
[সূরা আল-ফাতিহাঃ ০৩]

আল্লাহর সুন্দরতম গুণগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল তিনি নিতান্ত মেহেরবান ও পরম দয়ালু। আমাদেরও উচিত এই গুণগুলো নিজেদের মধ্যে ধারণ করা এবং আমাদের আশেপাশের মানুষদের প্রতি দয়াশীল হওয়া।  গরীব রিক্সাওয়ালাটিকে ২/৪ টাকা বেশি দিলে কিংবা আপনার বাসার কাজের মেয়েটিকে নিজেরা যা খান তা-ই খাওয়ালে আপনার খুব ক্ষতি হবে না নিশ্চয়?

৪. নিয়মিত বিচার দিবসকে স্মরণ করুনঃ

যিনি বিচার দিনের মালিক।
[সূরা আল-ফাতিহাঃ ০৪]

প্রতিনিয়ত নিজেকে স্মরণ করিয়ে দিন এই দুনিয়া তো কেবল খেল-তামাশা ও আমোদ-প্রমোদ এর জায়গা। খুব শীঘ্রই সে দিনটি আসবে যেদিন আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তাআলা) এর কাছে আমাদের ভালো কিংবা খারাপ প্রতিটি কাজেরই হিসেব দিতে হবে। আর ইনশা আল্লাহ কিয়ামতকে স্মরণের এই অভ্যাসটি আমাদের দুনিয়া ও আখিরাতের (পরকালের) মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করবে। এজন্য প্রতিদিন রাতে সূরা মুল্‌ক (৬৭ নং) তিলাওয়াত করুন।

৫. শুধুমাত্র আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করুনঃ

আমরা একমাত্র তোমারই ইবাদত করি এবং শুধুমাত্র তোমারই সাহায্য প্রার্থনা করি।
[সূরা আল-ফাতিহাঃ ০৫]

মনে রাখবেন, আল্লাহ সবসময় আপনাকে সাহায্য করার জন্য মুখিয়ে আছেন। তিনি আপনার থেকে মাত্র একটি দুআ দূরে অবস্থান করছেন। এ ব্যাপারে মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তোমাদের যার যা কিছু প্রয়োজন আল্লাহর কাছে চাও। এমনকি যদি তা একটি জুতার ফিতাও  হয়।[২] তাই আমাদেরকে সকল ক্ষেত্রে একমাত্র আল্লাহর (সাহায্যের) উপর নির্ভরশীলতা বাড়াতে হবে, দুআর মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করতে হবে এবং ধৈর্যধারণ করতে হবে।

৬. সুন্নাহর অনুসরণ করুনঃ

আমাদেরকে সরল পথ দেখাও।
[সূরা আল-ফাতিহাঃ ০৬]

আর এই সরল পথ হচ্ছে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর দেখানো পথ অর্থাৎ তাঁর কথা, কাজ ও মৌন সম্মতি। তাই আমাদের উচিত প্রতিদিন অল্প অল্প করে দ্বীনের ব্যাপারে জানা। বিশেষ করে প্রতিদিন একটি করে নতুন সুন্নাহ শেখা ও দৈনন্দিন জীবনে কুরআনের অনুশাসনগুলো সম্পর্কে জানা এবং সেই অনুযায়ী আমল করা।

৭. ভালো কাজ করুন ও দ্বীনদার সঙ্গীর খোঁজ করুনঃ

সে সমস্ত লোকের পথ যাদেরকে তুমি নিআমত দান করেছ। তাদের পথ নয় যাদের প্রতি তোমার গজব নাযিল হয়েছে এবং যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে।
[সূরা আল-ফাতিহাঃ ০৭]

সবসময় ভালো কাজ করার চেষ্টা করুন এবং তাদের সাহচার্য কামনা করুন যাদের সাক্ষাত আপনাকে আল্লাহর কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। মনোযোগ দিয়ে জুমুআর খুতবাহ শুনুন এবং বিভিন্ন দ্বীনের হালাক্বায় (Study Circle) যোগদানের চেষ্টা করুন।

এই ৭ টি লক্ষ্য স্থির করে কাজ করার চেষ্টা করুন। ইনশা আল্লাহ আপনার জীবনের প্রতিটি দ্বীন হবে সফল ও বরকতময়।

পাদটীকাঃ
[১] সুনানে আন-নাসাই
[২] আত-তিরমিযি [ভাবানুবাদ]
 

মূল লেখকঃ সানা গুল ওয়াসীম
অনুবাদঃ মুসাফির শহীদ

No comments:

Post a Comment

Peace Be Upon You

Peace Be Upon You