Friday, April 17, 2015

ইস্তিখারার নিয়ম ও সুফল

শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু। 
Image result for salat prayer

হাদীস: عن جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُعَلِّمُنَا الِاسْتِخَارَةَ فِي الْأُمُورِ كَمَا يُعَلِّمُنَا السُّورَةَ مِنْ الْقُرْآنِ يَقُولُ إِذَا هَمَّ أَحَدُكُمْ بِالْأَمْرِ فَلْيَرْكَعْ رَكْعَتَيْنِ مِنْ غَيْرِ الْفَرِيضَةِ ثُمَّ لِيَقُلْ اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْتَخِيرُكَ بِعِلْمِكَ وَأَسْتَقْدِرُكَ بِقُدْرَتِكَ وَأَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ الْعَظِيمِ فَإِنَّكَ تَقْدِرُ وَلَا أَقْدِرُ وَتَعْلَمُ وَلَا أَعْلَمُ وَأَنْتَ عَلَّامُ الْغُيُوبِ اللَّهُمَّ إِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّ هَذَا الْأَمْرَ خَيْرٌ لِي فِي دِينِي وَمَعَاشِي وَعَاقِبَةِ أَمْرِي أَوْ قَالَ عَاجِلِ أَمْرِي وَآجِلِهِ فَاقْدُرْهُ لِي وَيَسِّرْهُ لِي ثُمَّ بَارِكْ لِي فِيهِ وَإِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّ هَذَا الْأَمْرَ شَرٌّ لِي فِي دِينِي وَمَعَاشِي وَعَاقِبَةِ أَمْرِي أَوْ قَالَ فِي عَاجِلِ أَمْرِي وَآجِلِهِ فَاصْرِفْهُ عَنِّي وَاصْرِفْنِي عَنْهُ وَاقْدُرْ لِي الْخَيْرَ حَيْثُ كَانَ ثُمَّ أَرْضِنِي قَالَ وَيُسَمِّي حَاجَتَه (أخرجه البخاري).
অনুবাদ:
জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূল (সাঃ) আমাদেরকে সকল ব্যাপারে ইস্তিখারা শিক্ষা দিতেন যেভাবে তিনি আমাদেরকে কুরআনের সূরা শিক্ষা দিতেন। তিনি বলেছেন: তোমাদের কেউ যখন কোন কিছু নিয়ে চিন্তা করে তখন যেন সে ফরয ভিন্ন (অর্থাৎ নফল) দুই রাকাত সালাত আদায় করে অতপরঃ বলে: “হে আল্লাহ্‌! আমি আপনার ইলম অনুসারে আপনার নিকট কল্যাণ কামনা করি। আমি আপনার নির্ধারণের আপনার তাকদির কামনা করি এবং আপনার অপার অনুগ্রহ থেকে (কিছু অনুগ্রহ) কামনা করি। নিশ্চয় আপনিই (ভাগ্য) নির্ধারন করেন, আমি নির্ধারন করিনা। আর আপনি জানেন, আমি জানিনা। হে আল্লাহ্‌! যদি আপনার জ্ঞানে থাকে যে, এই ব্যপারটি আমার দ্বীন, জীবন যাপন, এবং আখিরাতের জন্য কল্যাণকর  অথবা তিনি বলেছেন আমার দুনিয়া ও আখিরাতের জন্য কল্যাণকর, তাহলে আমার জন্য ইহা নির্ধারন করুন। এবং আমার জন্য তা সহজ করে দিন। অতপরঃ এর মধ্যে আমার জন্য বরকত দান করুন। আর যদি আপনার জ্ঞানে থাকে যে এই ব্যাপারটি আমার দ্বীন, আমার জীবন যাপন ও আখিরাতের জন্য অকল্যাণকর অথবা তিনি বলেছেন: আমার পার্থিব জগত ও পরকালের জন্য অকল্যাণকর তাহলে আমাকে এর থেকে দূরে রাখেন এবং ইহাকে আমার থেকে দূরে রাখেন এবং আমার জন্য কল্যাণ নির্ধারন করুন যেখানেই তা নিহিত রয়েছে। অতপরঃ এর দ্বারাই আমাকে সন্তুষ্ট রাখুন”। এবং সে তার প্রয়োজনটি (দোয়ায়) উল্লেখ করবে।

ইস্তিখারার গুরুত্ব ও সুফল
কয়েকটি হাদীস
  •  সা’আদ বিন আবু ওয়াক্কাস (রাঃ) থেকে বর্নিত, রাসূল (সাঃ) বলেন: বনী আদম তার রবের কাছে ইস্তিখারা (কল্যাণ প্রার্থনা) করাই তার সৌভাগ্যের বিষয়। বনী আদমের আরো সৌভাগ্য হচ্ছে আল্লাহ্‌ তাআলা তার জন্য যা নির্ধারন করেন তাতে সন্তুষ্টি থাকার মাধ্যমে। আর বনী আদমের দূর্ভাগ্য হচ্ছে আল্লাহ্‌র নিকট ইস্তিখারা বন্ধ করে দেয়া এবং বনী আদমের আরো দূর্ভাগ্য হচ্ছে আল্লাহ্‌ তাআলা যা নির্ধারন করেছেন তাতে অসন্তুষ্ট হওয়া। [মুসনাদে আহমাদ, হাকেম-ইসনাদ সহীহ, তিরমিযী-গরীব]।
  • রাসূল (সাঃ) যখনি কিছু চাইতেন তখনি বলতেন: হে আল্লাহ্‌! আমার বিষয়টাকে কল্যাণকর করুন এবং তা বাস্তবায়ন করতে আমাকে ইলহাম (ঐশী ইঙ্গিত) করুন। অতপর (ইতিবাচক ও নেতিবাচক) দুইটি বিষয়ের উত্তমটি আমার জন্য নির্বাচিত করুন।[তিরমিযী]।
  • আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সাঃ) বলেছেন: হে আনাস, তুমি যখন কোন বিষয়ে চিন্তা করবে তখন সে বিষয়ে তোমার রবের কাছে সাতবার ইস্তিখারা কর। অতপর: তোমার অন্তরে যা জাগ্রত হয় তার দিকেই তাকাও। নিশ্চয় এর মধ্যেই কল্যাণ রয়েছে। [ইবনুস্‌সুন্নী-গরীব]।
  •  ইবনে তাইমিয়া (রাঃ) বলেন: যে ব্যক্তি সৃষ্টিকর্তার সাথে ইস্তিখারা করে এবং সৃষ্টির (মানুষের) সাথে পরামর্শ করে তার (প্রাপ্ত) বিষয়ে অটল থাকে সে কখনো লজ্জিত হয়না।
রিফলেকশন:
সুপ্রিয় ভাই ও বোন!
  • আপনি কি কখনও এই হাদীসগুলোর উপর আমল করেছেন?
  • আপনি কি রাসূলুল্লাহর এই মৃত সুন্নাতটি কখনও এক মুহুর্তের জন্য জীবিত করেছেন?
  • কতবার আপনি কোন প্রকার গভীর চিন্তা ভাবনা ছাড়াই বিভিন্ন কাজ করে ব্যর্থ হয়েছেন? লজ্জিত হয়েছেন? নিরাশ হয়েছেন করনীয় কাজ থেকে?
  • কতবার আপনি বিভিন্ন কাজে দোদল্যতা ও সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগেছেন?
  • কত বার আপনি মনের প্রশান্তিকে উপেক্ষা করে বিভিন্ন কাজ করে ব্যর্থ ও লজ্জিত হয়েছেন? এত সব অস্থিরতা আর পেরেশানি কিছুই হতনা যদি আপনি ইস্তিখারার মাধ্যমে আপনার চিন্তিত বিষয়ে আল্লাহর নিকট কল্যাণ কামনা করতেন এবং অকল্যাণ থেকে মুক্তি চাইতেন।
  • কতবার আপনি আপাততঃ দৃষ্টিতে চমৎকার লেগেছে তাই গভীর চিন্তা না করে কৃত কর্মের জন্য আপসোস করেছেন আর বলেছেন হায়! যদি এমনটা না করতাম তাহলে এরকম হতনা!
  • কতবার আপনি আপাততঃ দৃষ্টিতে অশোভনীয় লাগার কারণে ভাল সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি অথচ তা ছিল আল্লাহ্‌র কাছে কল্যাণকর? এবং আপসোস করেছেন আর বলেছেন হায় যদি এমনটা করতাম তাহলে কতনা ভালো হত!
  • বর্তমানে হয়ত কোন কিছু বাহ্যিক দৃষ্টিতে আপনার কাছে ভাল মানাচ্ছেনা কিন্তু সেটি যে আপনার জন্য কল্যানকর ইস্তিখারা করে প্রশান্তি সহকারে তাতে অগ্রসর হতে পারেন।
  • হয়ত কোন কিছুকে আপনি সুন্দর হিসেবে দেখছেন কিন্তু ইস্তিখারা করে সেটি থেকে সরিয়ে পড়তে পারেন।
  • কোন বিষয়ে আপনার আগেই ঝোঁক থাকলে আসলেই সেটি পজেটিভ ও কল্যাণকর কিনা তা নিশ্চিত হতে ইস্তিখারা করবেন।
  • আপনি হঠাৎ অনাকাংখিত কিছু সিদ্ধান্তের মুখোমুখি হলে এই সে ক্ষেত্রে আপানার ইতিবাচক কিংবা নেতিবাচক সাড়াকে নিশ্চিত করতে ইস্তিখারা করতে পারেন।
কোন বিষয়ে ইস্তিখারা করবেন:
রাসূল (সাঃ) সকল বিষয়েই ইস্তিখারা করতে উদ্ভুদ্ধ করেছেন। কিন্তু অলসতা ও গুরুত্ব না দেয়া ইত্যাদি মানবীয় কারণে ইস্তিখারা করা অনেকের পক্ষেই সম্ভব হয়ে উঠেনা। তাই অন্ততঃ নিজের জীবনের বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে ইস্তিখারা করা প্রয়োজন। তাহলে জীবনের কিছু টার্নিং পয়েন্টে দোদল্যতা, সিদ্ধান্তহীনতা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে এবং এই সকল ক্ষেত্রে যেই সিদ্ধান্ত কল্যাণকর সেই সিদ্ধান্ত নিতে আল্লাহ্‌ তাআলা সাহায্য করবেন। এমন গুরুত্ব বিষয়গুলো যেমন আপনার বিদেশ যাওয়া, নিদিষ্ট কোন চাকুরীতে যোগদান, কারো সাথে ব্যবসা, কারো সাথে আপনার বিবাহ, কাউকে কোন পরামর্শ দেয়া, কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত ইত্যাদি।

ইস্তিখারার সুফল:
  • ব্যক্তিগত বিভিন্ন বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে কার্যকরী সহায়ক।
  • যে কোন সিদ্ধান্তে দোদল্যতা ও সিদ্ধান্তহীনতা থেকে মুক্তি।
  • অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও জটিল কাজেও টেনশন ফ্রি ও মানসিক প্রশান্তি।
  • আল্লাহ্‌র উপর ঈমান ও তাওয়াক্কুল (ভরসা) বৃদ্ধি।
  • দুনিয়াবী কাজে ব্যর্থতার লজ্জা থেকে মুক্তি।
  • আল্লাহ্‌র কাছে বেশী বেশী চাওয়ার মানসিকতা তৈরি।
  • আল্লাহ্‌র সাথে ব্যক্তির গোপন ও সরাসরি একটি সম্পর্ক তৈরি হয়।
  • দুনিয়া ও আখিরাতের সফলতা।
ইস্তিখারা কারা করবেন?
  • প্রত্যেক ব্যক্তি তার নিজের প্রয়োজনে সে নিজেই ইস্তিখারা করবে।
  • ব্যক্তির সিদ্ধান্তের সাথে পরিবারের সদস্য, অভিভাবক, আত্নীয় স্বজন এধরণের যারা সম্পৃক্ত তারাও সিদ্ধান্ত নেয়ার ব্যপারে ইস্তিখারা করতে পারেন। কারণ যারা সিদ্ধান্ত নিবেন তিনি যেহেতু তাদের একজন তাই তার সিদ্ধান্ত দেয়ার ব্যপারেও তিনি ইস্তিখারা করবেন।
  • যারা কাছে মানুষ কোন ব্যপারে পরামর্শ চান তারাও সঠিক পরামর্শ দেয়ার জন্য ইস্তিখারা করতে পারেন।
ইস্তিখারা কিভাবে করবেন?

রাতে ঠিক শোয়ার আগে:
১. অযু করে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়বেন। এটি স্বাভাবিক নফল নামাজের মতই। এতে বিশেষ কোন নিয়তের প্রয়োজন নেই। তবে সালাত কেন পড়ছেন তা আপনার অন্তরে জাগ্রত থাকাই যথেষ্ট।
২. নামাজের পর ইস্তিখারার দোয়াটি পড়বেন। (উল্লেখ্য যে, হাদীসে দুনিয়া ও আখিরাত বুঝাতে দুই ধরণের শব্দগুচ্ছ বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু আপনাকে দোয়াতে একভাবেই বলতে হবে। শব্দগুচ্ছ দুটির প্রথমটি উল্লেখ করলাম। দ্বিতীয় শব্দগুচ্ছটি সহজ হওয়া সত্ত্বেও মুছে দিলাম। কারণ এটির উচ্চারণে আপনাদের ভুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশী)।
দোয়ার পূর্ণাঙ্গ রূপ:
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْتَخِيرُكَ بِعِلْمِكَ وَأَسْتَقْدِرُكَ بِقُدْرَتِكَ وَأَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ الْعَظِيمِ فَإِنَّكَ تَقْدِرُ وَلَا أَقْدِرُ وَتَعْلَمُ وَلَا أَعْلَمُ وَأَنْتَ عَلَّامُ الْغُيُوبِ اللَّهُمَّ إِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّ هَذَا الْأَمْرَ خَيْرٌ لِي فِي دِينِي وَمَعَاشِي وَعَاقِبَةِ أَمْرِي فَاقْدُرْهُ لِي وَيَسِّرْهُ لِي ثُمَّ بَارِكْ لِي فِيهِ وَإِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّ هَذَا الْأَمْرَ شَرٌّ لِي فِي دِينِي وَمَعَاشِي وَعَاقِبَةِ أَمْرِي فَاصْرِفْهُ عَنِّي وَاصْرِفْنِي عَنْهُ وَاقْدُرْ لِي الْخَيْرَ حَيْثُ كَانَ ثُمَّ أَرْضِنِي
দোয়ার অর্থ:
“হে আল্লাহ্‌! আমি আপনার ইলম অনুসারে আপনার নিকট কল্যাণ কামনা করি। আমি আপনার নির্ধারণের আপনার তাকদির কামনা করি এবং আপনার অপার অনুগ্রহ থেকে (কিছু অনুগ্রহ) কামনা করি। নিশ্চয় আপনিই (ভাগ্য) নির্ধারন করেন, আমি নির্ধারন করিনা। আর আপনি জানেন, আমি জানিনা। হে আল্লাহ্‌! যদি আপনার জ্ঞানে থাকে যে, এই ব্যপারটি আমার দ্বীন, জীবন যাপন, এবং আখিরাতের জন্য কল্যাণকর, তাহলে আমার জন্য ইহা নির্ধারন করুন এবং আমার জন্য তা সহজ করে দিন। অতপরঃ এর মধ্যে আমার জন্য বরকত দান করুন। আর যদি আপনার জ্ঞানে থাকে যে এই ব্যাপারটি আমার দ্বীন, আমার জীবন যাপন ও আখিরাতের জন্য অকল্যাণকর, তাহলে আমাকে এর থেকে দূরে রাখেন এবং ইহাকে আমার থেকে দূরে রাখেন। আর আমার জন্য কল্যাণ নির্ধারন করুন যেখানেই তা নিহিত রয়েছে। অতপরঃ এর দ্বারাই আমাকে সন্তুষ্ট রাখুন”।
৩. দোয়ার শেষে আল্লাহ্‌কে আপনার খুব নিকটে মনে করে তাঁর কাছে আপনার নির্দিষ্ট প্রয়োজনের কথা অনুনয় বিনয় করে বলুন।  দোয়ার সময়ের এটা আন্তরিকভাবে বিশ্বাস রাখুন এবং মনে মনে বলুন আমি আল্লাহ্‌র কাছে যা চাচ্ছি এর রেজাল্ট অবশ্যই তিনি আমাকে দিবেন এবং প্রাপ্ত নির্দেশনাতে আমি সন্তুষ্ট থাকব এবং সে অনুযায়ী কাজ করা শুরু করব। ইনশা আল্লাহ্‌।
৪. এর পর অন্য কোন কিছু না করে এবং যথা সম্ভব কোন কথা না বলে ঘুমের দোয়া পড়ে শুয়ে পড়েন।
(লক্ষনীয়: আপনি যদি আরবী পারেন তাহলে أَنَّ هَذَا الْأَمْرَ  এর স্থানে আপনার আপনার বিষয়টি উল্লেখ করুন। অন্যথায় দোয়াটি পড়ে এর পর আপনার মনের বিষয়টা আল্লাহ্‌র কাছে বলেন এবং এ ব্যপারে কল্যাণকর হলে ইতিবাচক এবং অকল্যাণকর হলে নেতিবাচক নির্দেশনা পেতে ও সে হিসেবে সিদ্ধান্ত নিতে তাঁর সাহায্য কামনা করুন।

408657_10150467809812096_187588732095_9181115_1466138514_n

ইস্তিখারার রেজাল্ট কিভাবে বুঝবেন?
এটি একটি কমন ও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। রাসুল (সাঃ) আনাস (রাঃ) কে বলেছেন: সাত বার অর্থাৎ পর পর সাতদিন ইস্তিখারা করে মনের গতি ও ঝোঁক যে দিকে যায় তার সিদ্ধান্ত নিতে। কারণ অনেক সময় সরাসরি কোন নির্দেশনা পাওয়া যায়না। তাই না জানার কারণে কনফিউশন থেকে যায়। তাই বিষয়টিকে আরো পরিষ্কার করতে এবং আরো কার্যকর হিসেবে গ্রহণ করতে কিছু টিপস উল্লেখ করলাম। যারা বিভিন্ন বিষয়ে নিয়মিত ইস্তিখারা করে সুফল ভোগ করেছেন তাদের সাথে একান্তে আলাপে যা জানা গেল তা পর্যায়ক্রমে উল্লেখ করলাম:
  • আপনি যে বিষয়ে ভাবছেন আপনি স্বপ্নে হুবহু সে বিষয়ের সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন কিংবা তা বর্জনমূলক কাজ দেখতে পাবেন এবং এটি সরাসরি আপনার সিদ্ধান্তেই। (এটি হচ্ছে ইস্তিখারার সর্বোচ্চ রেজাল্ট)।
  • অথবা আপনি যা ভাবছেন সে বিষয়ে স্বপ্নে আপনার পরিবারের সদস্যদের কিছু ইতিবাচক কিংবা নেতিবাচক কাজ দেখতে পাবেন।
  • অথবা স্বপ্নে কিছু দেখবেননা কিন্তু আপনার মন যত দিন যায় তত বিষয়টির দিকে ঝোঁকতে থাকে কিংবা তার প্রতি অনীহা সৃষ্টি হতে থাকে।
  • অথবা এ ব্যপারে আপনার মন স্বাভাবিক এবং নেতিবাচক কিছু আসছেনা। তাহলেও সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
  • কেউ প্রথম রাতেই রেজাল্ট পেয়ে যান এবং পরে আরও নিশ্চিত হওয়ার জন্য অপেক্ষা করেন। আবার কারো বিলম্বও হয়ে থাকে।
  • আল্লাহ্‌র সাথে আপনার সম্পর্কের উপর ভিত্তি করে আপনি আরও উচ্চ মানের রেজাল্ট ও পেতে পারেন।
ইস্তিখারার আদব
  • আল্লাহ্‌র প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস ও ভরসা রেখে ইস্তিখারা করতে হবে।
  • পর পর ন্যুনতম সাত দিন ইস্তিখারা করতে হবে।
  • ইস্তিখারার রেজাল্টের জন্য ধৈয্য সহকারে অপেক্ষা করতে হবে। আল্লাহ্‌ আপনাকে সহযোগিতা করবেন এটা মনে রাখলে আরো সহজ হবে।
  • ইস্তিখারা করার সময় আপনার বিষয়ে আপনাকে নিউট্রেল হতে হবে এই অর্থে যে আপনি যা রেজাল্ট পাবেন সে অনুযায়ী কাজ করার মানসিকতা রাখেন এবং এর মধ্যেই কল্যাণ মনে করেন।
  • ইস্তিখারার রেজাল্ট পেতে বিলম্ব হলে রেজাল্ট পাবেননা এমনটা ভেবে নিরাশ হওয়া যাবেনা।
  • ইস্তিখারার রেজাল্ট পেলে বিশেষ ব্যক্তি কিংবা বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া অন্যের কাছে বলা ঠিক নয়। কারণ এর মাধ্যমে আল্লাহ্‌র উপর আপনার তাওয়াক্কুল বাড়ছে এবং ধীরে ধীরে আল্লাহ্‌র সাথে আপনার সম্পর্ক নিবিড় হচ্ছে। আর তাই এমন গোপন বিষয়টা অহেতুক ফাঁস করলে আপনার ইবাদতের মান কমে যাবে এবং নিজের ব্যপারে উচ্চ ধারণা হেতু অহংকার প্রকাশের সম্বাবনা আছে। তাছাড়া এটি আপনার কাজের জন্য দৃঢ় একটি সমর্থক এবং আপনার মনোবলকে দৃঢ় করতে সহকারী। কিন্তু অন্য মানুষের জন্য এটি অকাট্য কিছু নয়। তবে তাদের কাছেই বলবেন যারা আপনাকে জানেন এবং বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে আপনাকে আপনার উদ্দৃষ্ট কাজে সহযোগিতা করতে পারেন।
  • নিদিষ্ট সময়ের মধ্যে যদি রেজাল্ট না পাওয়া যায় তাহলে আল্লাহ্‌ আপনাকে দিতে পারেন এই ধারণাকে আরো প্রবল করে কিছু দিন পর একই নিয়মে আবার চেষ্টা করুন। ইনশা আল্লাহ্‌ আপনি নিরাশ হবেননা।
রিফলেকশন:
  • আসলে ইস্তিখারার বিষয়টা সম্পূর্ণভাবে আল্লাহ্‌র সাথে ব্যক্তির সম্পর্কের উপর ভিত্তি করেই হয়ে থাকে। বিষয়টি আল্লাহ্‌র সাথে একান্ত আপনার নিজের। তাই পূর্ণ স্কেলে পরিমাপ আপনিই করতে পারবেন। তবে আল্লাহ্‌র সাথে আপনার বর্তমান সম্পর্ক বেশী ভালো নয় এটা ভেবে ইস্তিখারা থেকে দূরে থাকলে আপনি অপসিদ্ধান্তে ভোগবেন। তাই ইস্তিখারার মাধ্যমেই আল্লাহ্‌র সাথে আপনার সম্পর্ক সৃষ্টি করুন এবং পরিমাপ করুন।
  • আপনার ঈমান, বর্তমান তাওয়াক্কুল এবং আল্লাহ্‌র সাথে সম্পর্কের ভিত্তিতে খুব কম সময়ে খুব স্পষ্ট রেজাল্ট কিংবা কিছু বিলম্বে তুলনামূলক কম স্পষ্ট রেজাল্ট পাবেন। এজন্য প্রচেষ্টাকে অব্যাহত রাখতে হবে। এতেই আপনার কল্যান নিহিত।
  • আপনি যদি একবার ইস্তিখারা রেজাল্ট পান তাহলেই আপনি এর স্বাদ আস্বাদন করবেন এবং এর পর যে কোন গুরুত্বপূর্ণ কাজেই ইস্তিখারা করতে আপনার মন চাইবে।
  • ইস্তিখারার মাধ্যমে আল্লাহ্‌র সাথে বান্দার সম্পর্ক নিবিড় হয় এবং ঈমান ও তাওয়াক্কুল বেড়ে যায়। আল্লাহ্‌ তা’আলা বলেছেন: “মুমিন ব্যক্তিদের আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করা উচিৎ”।[১৪:১২] তিনি আরো বলেছেন: যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র উপর তাওয়াক্কুল করে তিনি তার জন্য যথেষ্ট।[৬৫:৩]
  • এই ইস্তিখারার সুফল একে বারেই নিশ্চিত। শুধু গ্যারান্টির জন্য প্রয়োজন আপনার প্র্যাকটিস।
Image result for salat prayer

আপনার সিদ্ধান্ত:
আসুন! আমরা মহান আল্লাহ্‌র কাছে আমাদের প্রয়োজন মেটাতে একটু ধরনা দেই। আমাদের নিজেদের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আল্লাহ্‌র কাছে ইস্তিখারা করতে শিখি এবং ইস্তিখারার মাধ্যমে জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ও টার্নিং পয়েন্টগুলোতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামীনের গচ্ছিত কল্যাণ হাসিল করতে উদ্যত হই। দু’একটি ইস্তিখারার সুফল পেয়ে এর নিয়মিত অভ্যাস গড়ে তুলি। এর মধ্যেই মহান আল্লাহ্‌ তা’আলা আমাদের জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের উপায় ও কল্যাণ নির্ধারন করে রেখেছেন। আল্লাহ্‌ তা’আলা আমাদেরকে ইস্তিখারা করার জন্য মানসিকতা ও তাওফীক দান করুন। আমীন!!

লেখকঃ আবু তালিব মোহাম্মাদ মোনাওয়ার।

Main-link: https://whatislamsay.wordpress.com 

No comments:

Post a Comment

Peace Be Upon You

Peace Be Upon You