Monday, November 16, 2015

Now that You are safe, every adversity is gone!

https://www.flickr.com/photos/53623929@N07/9426030560

উহুদের যুদ্ধ শেষ হয়েছে।
.
উহুদের যুদ্ধে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এঁর উপরে সরাসরি তীব্র আঘাত এসেছিল। তাঁর শিরস্ত্রাণ এর আংটা গালের মাংসের ভেতর ঢুকে গিয়েছিল। তাঁর দাঁত মুবারক পড়ে গিয়েছিল।
.
ত্বালহা ইবনে উবাইদুল্লাহ (রাঃ) শত্রুপক্ষের তীরের আঘাত থেকে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে রক্ষা করার জন্য ঢাল হিসেবে নিজের হাতকে ব্যবহার করেছিলেন। শত শত তীরের আঘাতে ঝাঁঝরা হয়ে গেল তাঁর হাত। মধ্যমা ও তর্জনী কেটে পড়ে যাওয়া সেই হাত পরে অকেযো হয়ে পড়ে এক সময়।
.
আনাস ইবনে আন-নাদর (রাঃ) এর বীরোচিত শাহাদাতের পর তাঁর শরীরে সত্তরটিরও বেশি আঘাত সনাক্ত করা হয়েছিল। সা'দ ইবনে আবী ওয়াক্কাস (রাঃ) সিংহের মতন তিন দিকে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন প্রাণপ্রিয় রাসুলের প্রতিরক্ষার জন্য। এমন কি যুদ্ধের এক পর্যায়ে গুজব রটে গেল– রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) শহীদ হয়েছেন!
.
.
যুদ্ধ এক সময় শেষ হলো। সাহাবীরা আহত রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে নিয়ে মদীনাতে ফেরত যাচ্ছেন। বিদ্যুতের মতো তাঁর শাহাদাতের গুজব ততক্ষণে মদীনা এবং আশেপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে।
.
বুকের ভেতর তীব্র কষ্ট এবং হাহাকার নিয়ে মদীনা থেকে বৃদ্ধ, নারী এবং শিশুরা ওহুদের দিকে রওনা করলো। এই দলে বনু দীনারের এক মহিলা ছিলেন যিনি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এঁর শাহাদাতের গুজবে পাগলের মতো হয়ে গিয়েছিলেন।
.
.
পথের মাঝামাঝি যুদ্ধফেরত একদল সাহাবীর সাথে দেখা হলো সেই মহিলার। উদ্ভ্রান্তের মতো তাঁদের কাছে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এঁর প্রকৃত খবর জানতে চাইলেন তিনি। সাহাবীদের কেউ নিশ্চিত কিছু বলতে পারলেন না। কিন্তু একটি খবর নিশ্চিত করলেন তাঁরা– মহিলার ভাই বীরের মতো যুদ্ধ করে শাহাদাত বরণ করেছেন।
.
এই ভয়ংকর কষ্টের খবর বিন্দুমাত্র প্রভাবিত করলো না মহিলাকে। তিনি পা চালালেন সামনে। এরপরে সাহাবীদের আরো দু'টি দলের সাক্ষাত পেলেন তিনি। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এঁর সুনির্দিষ্ট অবস্থা বলতে না পারলেও তাঁরা মহিলার পরিবারের আরো দুইজন সদস্যের বীরোচিত শাহাদাতের খবর নিশ্চিত করলেন – মহিলার বাবা এবং স্বামী!
.
প্রিয় পরিবারের সবচেয়ে প্রিয় ও কাছের তিনজন মানুষের মৃত্যুর খবর বিন্দুমাত্র বিচলিত করলো না মহিলাকে। সম্পূর্ণ চিন্তা জুড়ে তাঁর একটি মাত্র প্রশ্ন– "আপন প্রাণের চেয়েও বেশি প্রিয় নবীজী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জীবিত আছেন তো? সুস্থ আছেন তো রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)?"
.
.
এক সময় রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে ঘিরে থাকা যুদ্ধ ফেরত সাহাবীদের মূল দলের সাথে দেখা হলো সদ্য বাবা, ভাই ও স্বামী হারার দুঃসংবাদ পাওয়া মহিলার। প্রিয় নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এঁর বেঁচে থাকার খবর তাঁকে নতুন করে উজ্জীবিত করলো। কিন্তু শুধু কথায় আশ্বস্ত হলেন না তিনি, নবীজিকে নিজ চোখে দেখতে চাইলেন তিনি।
.
মহিলার পরিবারের সদস্যদের শাহাদাতের খবর এবং তাঁর ইচ্ছের কথা রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে জানানোর পরে তিনি গভীর দুঃখের সাথে মহিলাকে তাঁর সামনে আনতে বললেন। মহিলাকে আনা হলো। উটের পিঠে সওয়ার রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে জীবিত অবস্থায় দেখে চোখে-মুখে আনন্দের ঝিলিক বয়ে গেল স্বজন হারানো মহিলার।
.
আল্লাহ সুবহা'নু ওয়া তাআ'লার প্রশংসা এবং শোকর প্রকাশ করে মহিলা যে কথাটি বলেছিলেন– সেটির প্রকৃত বাংলা অনুবাদ করা আমার পক্ষে সম্ভব না। সেই দুঃসাহসও করছি না আমি। আমি যেখান থেকে পড়েছিলাম, সেই লেখাটি ইংরেজি ছিল। সেটি পুরোপুরি তুলে দিলাম আমি!
.
মহিলা পরম শান্তি বুকে নিয়ে বলেছিলেন –
.
"Now that You are safe, every adversity is gone!"
.
.


[সুত্র: সীরাতু ইবনে হীশাম (দ্বিতীয় খন্ড, পৃষ্ঠা- ৯৯)]


by Mohammad Javed Kaisar

Peace Be Upon You

Peace Be Upon You