Tuesday, March 31, 2015

অন্ততপক্ষে তুমি আমার মাথায় একটা চুম্বন করো, তাহলেও আমি তোমাকে ছেড়ে দেবো










রোমান সম্রাট হিরাক্লিয়াসঃ “অন্ততপক্ষে তুমি আমার মাথায় একটা চুম্বন করো, তাহলেও আমি তোমাকে ছেড়ে দেবো”।
উমার ইবন খাত্তাব রাঃএর শাসনকাল চলছে। এক সময়কার অজেয় দুই সাম্রাজ্য যুগপতভাবে মুসলিমদের দখলে চলে আসছে। রোমান সম্রাট হিরাক্লিয়াস সিরিয়ার বিশাল এলাকা ছেড়ে ক্রমাগত দূরে সরে যাচ্ছেন। কয়েকটি যুদ্ধক্ষেত্রে যুদ্ধ হচ্ছে মুসলিম ও রোমানদের মধ্যে। হিজরী ১৯ সালে খলিফা উমার রাঃ এমনই এক বাহিনী পাঠালেন রোমানদের বিরুদ্ধে, যে বাহিনীতে আব্দুল্লাহ বিন হুজাফাহ আস সাহমী(রাঃ)ও ছিলেন। হিরাক্লিয়াস মুসলিমদের দৃঢ় ঈমান, বীরত্ব আর আল্লহর জন্য অকাতরে প্রাণ বিলিয়ে দেয়ার অনেক ঘটনা শুনতেন। তাই তিনি তাঁর সেনাদের নির্দেশ দিয়েছিলেন কোন মুসলিম সেনা বন্দী করা হলে তাকে যেন জীবন্ত অবস্থায় তাঁর কাছে আনা হয়। ঘটনাক্রমে রোমানদের হাতে আব্দুল্লাহ বিন হুজাফাহ আর আরো ক’জন মুসলিম সেনা বন্দী হলেন। এঁদের সবাইকে শক্ত করে বেঁধে নিয়ে আসা হলো সম্রাট হিরাক্লিয়াসের কাছে। উল্লসিত রোমান সেনারা সম্রাটকে বললো,
“এই লোক মুহাম্মাদের একজন সহচর আর প্রথমভাগেই সে এ দীন গ্রহন করেছে। আমরা তাকে জীবন্ত আপনার কাছে হাজির করেছি”।
রোমান সম্রাট দীর্ঘক্ষণ আব্দুল্লাহর দিকে তাকিয়ে রইলেন, এরপর বন্দী আবদুল্লাহর দিকে তাকিয়ে কথা বললেন তিনি,
হিরাক্লিয়াসঃ আমি তোমার কাছে একটি বিষয় উপস্থাপন করতে চাই।
আবদুল্লাহঃ বিষয়টি কি?
হিরাক্লিয়াসঃ তুমি খৃষ্টধর্ম গ্রহণ করো। যদি তা করো তাহলে তোমাকে মুক্তি দেব আর সম্মানিতও করবো
আবদুল্লাহঃ আফসোস, যেদিকে আপনি আমাকে ডাকছেন, তার চেয়ে হাজারবার মৃত্যুও আমার কাছে বেশী প্রিয়।
হিরাক্লিয়াসঃ আমি মনে করি তুমি একজন বুদ্ধিমান লোক। আমার প্রস্তাব মেনে নিলে আমি তোমাকে ক্ষমতার অংশীদার বানাবো, তোমার কাছে আমার মেয়েকেও বিয়ে দেবো।
আবদুল্লাহ মৃদু হাসলেনঃ আল্লাহর শপথ, আপনার গোটা সাম্রাজ্য আর সাথে আরবদের অধিকারে যা কিছু আছে তার সবই যদি আমাকে দেয়া হয় আর বিনিময়ে বলা হয় রাসুল্লাল্লাহ সাঃ আনীত দীনকে এক মুহূর্তের জন্যও ত্যাগ করতে, আমি তা করবোনা।
হিরাক্লিয়াসঃ তাহলে আমি তোমাকে হত্যা করবো এখনই।
আবদুল্লাহঃ আপনার যা খুশী আপনি করতে পারেন।
সম্রাটের নির্দেশে শুলিকাষ্ঠ প্রস্তুত করা হলো। ফাঁসিতে না ঝুলিয়ে বন্দীকে দুহাত বেঁধে শূন্যে দেহে ঝুলিয়ে দেয়া হলো। এবার তার কাছে খৃষ্টধর্ম পেশ করা হলো। তিনি অস্বীকার করলেন। এরপর নামিয়ে এনে দুপায়ে ঝুলানো হলো এবং এবার শুধু ইসলাম ত্যাগের ঘোষণা দেয়ার আহবান জানানো হলো। এবারও বন্দী দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করলেন। সম্রাটের রাগ বেড়ে চলেছে। তিনি বন্দীকে নামিয়ে আনতে ইশারা করলেন। বন্দীকে নামিয়ে আনা হলো। এবার সম্রাট সেনাবাহিনীর বিশাল সেনাদলের রান্নার জন্য ব্যবহার করা বিশাল কড়াই আনতে বললেন। কড়াই এনে সম্রাটের নির্দেশে তাতে তেল ঢালা হলো আর বন্দীকে সামনে বেঁধে রেখে কড়াইয়ের তেল ফুটিয়ে উত্তপ্ত করা হলো। এবার বন্দীদের থেকে দুজনকে সামনে আনা হলো। এদের ভেতর একজনকে পাঁজাকোলা করে উত্তপ্ত তেলে ফেলে দেয়া হলো। কিছুক্ষণের ভেতর তার হাড় থেকে মাংস খসে পড়তে লাগলো আর মৃত্যু হতে সময় লাগলো খুবই কম।
সম্রাট এবার আবার আবদুল্লাহকে ডেকে খৃষ্টধর্ম গ্রহণ করার আহবান করলেন। আবদুল্লাহ এবার আগের চেয়েও কঠোরভাবে তা প্রত্যাখ্যান করলেন। সম্রাটের নির্দেশে তাঁকে সেই কড়াইয়ের সামনে আনা হলো। আবদুল্লাহর চোখে এবার অশ্রু দেখা গেলো। লোকেরা সম্রাটকে বললো, “বন্দী এবার কাঁদছে”। সম্রাট বন্দীকে নামিয়ে আনতে বললেন। আবদুল্লাহকে নামিয়ে আনা হলো এবং সম্রাট আবার তাঁকে ইসলাম ত্যাগ করার প্রস্তাব দিলেন। আবদুল্লাহ আবারো কঠোরভাবে তা প্রত্যাখ্যান করলেন। সম্রাট বললেন,
“ধ্বংস হও তুমি। তাহলে তুমি কাঁদছিলে কেন?”
“আমি এজন্য কাঁদছিলাম যে, আমাকে এখন কড়াইয়ে ফেলা হবে আর আমার প্রাণ যাবে আল্লাহর জন্য যা আমি চেয়েছি। অথচ এখন আমার মনে হচ্ছে আমার যদি দেহের পশমের মতো অসংখ্য জীবন থাকতো, তাহলে তার সবই যদি আমি আল্লাহর জন্য বিলিয়ে দিতে পারতাম”।
সম্রাট খুব অসহায় বোধ করলেন। এক বন্দীর হাতে রোমান সম্রাটের এমন নাস্তানাবুদ অবস্থা পারিষদরা আর মেনে নিতে চাইছিলেন না। একজন সমাটের কানে পরামর্শ দিলেন। সম্রাট এবার বললেন,
“অন্ততপক্ষে তুমি আমার মাথায় একটা চুম্বন করো, তাহলেও আমি তোমাকে ছেড়ে দেবো”।
প্রথমে অস্বীকার করলেও আবদুল্লাহ বিন হুজাফাহ আস সাহমী এবার এর বিনিময়ে সকল বন্দীর মুক্তির শর্তে তা করতে রাজী বলে জানালেন। তিনি বললেন,
“যদি আমার সাথে অন্য মুসলিম বন্দীদেরও মুক্তি দেয়া হয়, আমি রাজী আছি”।
সম্রাট বললেন, “হ্যাঁ, অন্যদেরও ছেড়ে দেয়া হবে”।
আবদুল্লাহর বাঁধন ও বেড়ি খুলে দেয়া হলো। তিনি ধীর পায়ে হেঁটে গিয়ে সম্রাট হিরাক্লিয়াসের মাথায় চুম্বন করলেন। সম্রাট সকল মুসলিম বন্দীদের আবদুল্লাহর হাতে তুলে দেয়ার নির্দেশ দিলেন। সর্বোমোট ৮০ জন বন্দী মুক্তি পেলো।
আবদুল্লাহ বিন হুজাফাহ (রাঃ) মদীনায় ফিরে পুরো ঘটনা সবিস্তারে খলিফা উমারের (রাঃ) কাছে বর্ণনা করলেন। আনন্দে উমারের চোখ উদ্ভাসিত হয়ে উঠলো। তিনি উপস্থিত বন্দীদের দিকে তাকিয়ে বললেন, “প্রতিটি মুসলিমের উচিৎ আবদুল্লাহর মাথায় চুম্বন করা। আমিই তার সূচনা করছি”। এই বলে তিনি উঠে গিয়ে আবদুল্লাহর মাথায় চুম্বন করলেন।

(আবদুল্লাহ ও হিরাক্লিয়াসের এ ঘটনার বর্ণনাটি এসেছে যথাক্রমে হায়াতুস সাহাবা ১/৩০২, আল ইসাবা ২/২৯৬-৯৭, আল ইসতিয়ার, সুয়ারু মিন হায়াতিস সাহাবা ১/৫১-৫৬, উসুদুল গাবাহ ৩/১৪৩ ইত্যাদি নির্ভরযোগ্য ইতিহাস গ্রন্থে)

Writer: Amin Beg.

Avoid Ten Ways That Nullify Islam (Nawaaqid-ul-Islaam)















Nullifiers of Islam by Shaykh Ibn Baaz – alifta.com




All praise is due to Allah Alone. Peace and blessings be upon the Last Prophet, his family, Companions and those who follow his guidance.
A Muslim should know that Allah (may He be Praised) enjoins all the creation to embrace Islam, hold it firmly and avoid what contradicts it. Allah sent His Prophet Muhammad (peace be upon him) to call for that, informing them that whoever follows him will be guided and whoever turns away from him will be misguided. In many Ayahs (Qur’anic verses), Allah warned people against causes of apostasy and all forms of Shirk (associating others with Allah in His Divinity or worship) and Kufr (disbelief). Under the topic of the rulings of the apostate, scholars (may Allah be merciful with them) mentioned that a Muslim may abandon Islam by committing one of the nullifiers that make his blood and money violable and turn him out of the fold of Islam. The most dangerous and common ten nullifiers are mentioned by Shaykh and Imam Muhammad ibn `Abdul-Wahhab and other scholars (may Allah be merciful with them). Here we will list them in brief so that a Muslim can keep away from them and warn people against them in hope for safety and wellbeing. We will briefly elaborate on them.
First: Shirk in the worship of Allah. Allah (Exalted be He) says: Verily, Allâh forgives not that partners should be set up with Him (in worship), but He forgives except that (anything else) to whom He wills He (Exalted be He) also says: Verily, whosoever sets up partners (in worship) with Allâh, then Allâh has forbidden Paradise to him, and the Fire will be his abode. And for the Zâlimûn (polytheists and wrong-doers) there are no helpers. This includes invoking the dead and seeking relief, vowing or offering sacrifice for them.
Second: Whoever takes intermediaries between him and Allah, invokes, and asks them for intercession with Allah and puts his trust in them has committed Kufr (disbelief) according to the Ijma` (consensus) of scholars.
Third: Whoever does not hold the polytheists to be disbelievers, has doubts about their disbelief or considers their ways and beliefs to be correct has committed disbelief.
Fourth: Whoever believes that some guidance other than that of the Prophet (peace be upon him) is more complete than his guidance or that someone else’s judgment is better than his judgment, such as those who prefer the judgment of the Taghut (false gods) over his judgment, then he is a disbeliever.
Fifth: Whoever hates something that the Messenger (peace be upon him) came with, even though he may act on it, has disbelieved. Allah (Exalted be He) says: That is because they hate that which Allâh has sent down (this Qur’ân and Islâmic laws, etc.); so He has made their deeds fruitless.
Sixth: Whoever mocks or ridicules any part of the Messenger’s religion, its rewards or punishments has committed an act of disbelief. Allah (Exalted be He) says: Say: “Was it at Allâh (عز وجل), and His Ayât (proofs, evidence, verses, lessons, signs, revelations) and His Messenger (صلى الله عليه وسلم) that you were mocking?” Make no excuse; you disbelieved after you had believed.
Seventh: Sorcery, which includes magic spells that cause a person to hate or love someone/something. Whoever practices it or is pleased with it commits disbelief. The proof for this is the saying of Allah (Exalted be He): but neither of these two (angels) taught anyone (such things) till they had said, “We are only for trial, so disbelieve not (by learning this magic from us).”
Eighth: Supporting and assisting the polytheists against the Muslims. The proof for this is the saying of Allah (Exalted be He): And if any amongst you takes them as Auliyâ’, then surely he is one of them. Verily, Allâh guides not those people who are the Zâlimûn (polytheists and wrong-doers and unjust).
Ninth: Whoever believes that it is permitted for some people to be free of (implementing) the Shari`ah (Islamic law) brought with Muhammad (peace be upon him), then he is a disbeliever. Allah (Exalted be He) says: And whoever seeks a religion other than Islâm, it will never be accepted of him, and in the Hereafter he will be one of the losers.
Tenth: Turning away from Allah’s religion, not learning it or implementing it (is an act of disbelief). The proof for this statement is the saying of Allah: And who does more wrong than he who is reminded of the Ayât (proofs, evidence, verses, lessons, signs, revelations, etc.) of his Lord, then turns aside therefrom? Verily, We shall exact retribution from the Mujrimûn (criminals, disbelievers, polytheists, sinners).
There is no difference in committing these nullifiers between the utters them in humor, seriously, or even out of fear except for a person who says them under coercion. All of these (ten) matters are the gravest nullifiers that most often occur. A Muslim must beware of and keep away from these acts. We seek refuge with Allah from the things that entail His anger and severe punishment. May Allah’s Peace be upon the best of His Creation Muhammad, his family, and Companions!
The Fourth Nullifier includes those who believe that man-made laws and constitutions are better than the Shari`ah of Islam, equal to it, or that it is permissible to resort to them for judgment even if he believes that the judgment of Shari`ah is better. Likewise, whoever believes that it is not correct to implement the Laws of Islam in the twentieth century, that this is a cause for the fall of Muslims, or that it is limited to relationship between the servant and his Lord and should not interfere in the other affairs of life. The fourth category also includes those who hold that carrying out Allah’s laws, such as cutting off the hand of a thief or stoning a guilty adulterer is not befitting for this modern era. This category includes those who believe that it is permissible to rule by something other than the Laws of Allah (Shari’ah) in matters of transactions, Hudud (prescribed penalties) and so on, even if he does not believe that it is better than ruling by the Shari`ah. This is because, by doing that, he makes lawful that which Allah forbade, according to the consensus of scholars. Similarly, whoever makes lawful that which Allah has prohibited and this prohibition is indisputably established, such as adultery, Khamr (intoxicant), Riba (usury/interest) and ruling by anything other than the Shari`ah, then he is a disbeliever according to the consensus of Muslim scholars.
May Allah guide all of us to what pleases Him. May Allah guide us and all Muslims to His straight path! He is All-Hearer, Ever Near. May peace and blessings of Allah be upon our Prophet Muhammad, his family, and Companions!
Source for above : Shaykh Ibn Baaz – alifta.com


Saturday, March 21, 2015

বই পরিচিতিঃ Enjoy Your Life

বই পরিচিতি 

Enjoy Your Life


রহমান রহীম আল্লাহ্‌ তায়ালার নামে- 
Enjoy Your Life Bangla 1













Enjoy Your Life – জীবনকে উপভোগ করুন| 


সংক্ষিপ্ত বর্ণনাঃ এই বইটি নবীজির (সা) জীবন এবং ইসলামের সমৃদ্ধ সোনালি অতীত থেকে নেওয়া বেশকিছু ঘটনার এক অনবদ্য সংকলন। তাছাড়া বইটিতে লেখক জীবনের এমন কিছু ঘটনা টুকরো স্থান পেয়েছে যেগুলো পাঠকের চিন্তা জগতকে আলোড়িত করবে।
বইটির মৌলিক উদ্দেশ্য হলো বিভিন্ন আত্ম-উন্নয়নমূলক, সামাজিক দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে কীভাবে জীবনকে উপভোগ করা যায় সে সম্পর্কে পাঠককে দিকনির্দেশনা প্রদান করা।
বইটির সবচেয়ে আকর্ষণীয় এবং মনোমুগ্ধকর দিকটি হলো বইটিতে সামাজিক দক্ষতার সর্বোত্তম ব্যবহার আমাদের জীবনে কী পরিমাণ কল্যাণ বয়ে আনতে পারে তা নবীজি (সা) এবং তাঁর সাহাবা (রাঃ)  জীবন থেকে উদাহরণসহ দেখিয়ে দেওয়া হয়েছে। বইটি যেমন আত্ম-উন্নয়নের পথে একটি বাস্তবিক এবং সুপরিকল্পিত দিকনির্দেশিকা, ঠিক একইভাবে ঐতিহাসিক ঘটনাবলীর এক অমূল্য রত্নভাণ্ডার। বইখানি পাঠকের আত্ম-সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি তার আত্মার পুষ্টি যোগাবে এবং তার মননকে করবে শক্তিশালী।
সারা বিশ্বে এই বইটির প্রায় ২.৫ কোটি কপি বিক্রি হয়েছে।

 
Main-link
www.quraneralo.com 

 Download
Bangla Version

Direct 


Mediafire 
English version
http://d1.islamhouse.com/data/en/ih_books/single/en_enjoy_your_life.pdf


If you want to buy

Untitled-1
https://docs.google.com/forms/d/1SfBG7xlhP2-L5NFNaCyWsAXe4WC4fIfMqKxJzVPDx90/viewform

(Bangladesh only )
























বিশ্বজয়ী বাংলাদেশি হাফেজ

বিশ্বজয়ী বাংলাদেশি হাফেজ

রহমান রহীম আল্লাহ্‌ তায়ালার নামে-

Hifzul_874062120

মুখস্থ করার অভ্যাস সবার সমান নয়। সে হিসেবে বলা যায়, যারা পবিত্র কোরআনে কারিম মুখস্থ করেন তারা অবশ্যই প্রখর স্মৃতিশক্তির অধিকারী। একজন হাফেজে কোরআন পরকালে বিশেষ সম্মানে ভূষিত হবেন। দুনিয়াতেও হাফেজে কোরআনকে দেয়া হয় বিশেষ সম্মান ও মার্যাদা।
এরই ধারাবাহিকতায় বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে, বিভিন্ন উদ্যোগে হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। এর মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক বেশ কয়েকটি দেশে অনুষ্ঠিত হয় বিশ্বমানের হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতা। এসব প্রতিযোগিতার মূল্যমান যেমন বিশ্বমানের, তেমন এর গুরুত্বও ভিন্ন।
ইসলামি সভ্যতা বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন। রয়েছে আলাদা ঐতিহ্যও। সেই ঐতিহ্যের অংশ হিসেবেই বিশ্বব্যাপী অনুষ্ঠিত বিভিন্ন হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতায় স্বার্থকতার সাথে অংশগ্রহণ থাকেন বাংলাদেশের হাফেজরা।
বর্তমান সময়ে বিশ্বব্যাপী আলোচিত প্রতিযোগিতার নাম ‘আন্তর্জাতিক হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতা।’ এই প্রতিযোগিতায় বিভিন্ন বয়সী বাংলাদেশের হাফেজরা অত্যন্ত সফলতার সাথে অংশগ্রহণ করে আসছে। বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত এসব প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের ছেলে-মেয়েরা শীর্ষস্থান অধিকার করে দেশের সুনাম বয়ে আনছে। বিশ্বপরিমণ্ডলে ছড়িয়ে দিচ্ছে বাংলাদেশের সুনাম ও খ্যাতি।
ইসলামিক ফাউণ্ডেশনের ‘দ্বীনী দাওয়াত ও সংস্কৃতি বিভাগ’ বিভাগ থেকে দেয়া সর্বশেষ তথ্যানুসারে, এ পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশি হাফেজরা সৌদি আরব, দুবাই, লিবিয়া, মালয়েশিয়া, ইরান, মিশর, জর্দান, তুরস্ক, আলজেরিয়া, ভারত ও পাকিস্তানসহ প্রভৃতি দেশে আয়োজিত হিফজ, ক্বেরাত ও তাফসির প্রতিযোগিতায় প্রায় ১১০ জন হাফেজ, ক্বারী ও মুফাসসির বিভিন্ন মানের পুরস্কার অর্জন করেছেন। বাংলাদেশি মুদ্রায় এ সব পুরস্কারের আর্থিক মূল্য প্রায় ৪০ কোটি টাকা এবং প্রাপ্ত স্বর্ণমুদ্রার পরিমাণ ৩৫০ ভরি।

নিম্নে বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বলকারী কয়েকজন চ্যাম্পিয়ন হাফেজের কাহিনি উল্লেখ করা হলো—

হাফেজা ফারিহা তাসনিম : বিশ্বের ৪৩টি দেশের মধ্যে আন্তর্জাতিক বালিকা হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছে বাংলাদেশি শিশু ‘হাফেজা ফারিহা তাসনিম।’ ২০১৩ সালের ১৭ মে জর্দানের রাজধানী আম্মানে এ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। ফারিহা তাসনিম মাত্র ছয় বছর বয়সে সম্পূর্ণ কোরআন মুখস্থ করেন। প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় স্থান লাভ করে সৌদি আরব ও তৃতীয় হয় লিবিয়ার প্রতিযোগী।
হাফেজ নাজমুস সাকিব : ২০১৩ সালের ১৯ নভেম্বর থেকে ২ ডিসেম্বর পর্যন্ত মক্কা নগরীর হারাম শরিফে অনুষ্ঠিত হয় আন্তর্জাতিক হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতা। এ প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছে ময়মনসিংহের ছেলে নাজমুস সাকিব। প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিল ৭০টি দেশের প্রতিযোগী। প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছে নাজমুস সাকিব কাবা শরীফের ইমাম আবদুর রহমান আস সুদাইসের হাত থেকে গ্রহণ করেন পুরস্কারস্বরূপ ৮০,০০০ সৌদি রিয়াল, বিশেষ সম্মাননা পদক ও সার্টিফিকেট।
এর আগে সাকিব ২০১২ সালে ভারতের বেঙ্গালুরুতে অনুষ্ঠিত হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতায় এশিয়ার ২৭টি দেশের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করে। সাকিব ২০১৩ সালে এনটিভি-পিএইচপি কোরআনের আলো প্রতিযোগিতায়ও সাকিব প্রথম স্থান অর্জন করে প্রায় ২০ হাজার প্রতিযোগীকে পেছনে ফেলে। সাকিবের অর্জন এখানেই শেষ নয়। সে ২০১২ সালে দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতায় ৯০টি দেশের মধ্যে প্রথম স্থান অর্জন করে। পুরস্কার হিসেবে সাকিব পায় ৪৭ হাজার দিনার।
হাফেজ জাকারিয়া: মিসরের রাজধানী কায়রোতে অনুষ্ঠিত ২১তম আন্তজার্তিক হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করে মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার চর ইলামপুর গ্রামের কিশোর হাফেজ জাকারিয়া। ২০১২ সালে ৫০টি দেশের ক্ষুদে হাফেজদের পেছনে ফেলে চ্যাম্পিয়ান হয়েছে সে। ১২ বছর বয়সী জাকারিয়ার বাবার নাম মাওলানা ফয়জুল্লাহ। এর আগে সে ২০১১ সালে কাতারে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক কোরআন তেলাওয়াত প্রতিযোগিতায় তৃতীয় স্থান লাভ করে।
হাফেজ আবদুল্লাহ আল মামুন: সৌদি আরবে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতা ২০১৪ সালে প্রথম স্থান অধিকার করেছে বাংলাদেশের গর্ব ১২ বছর বয়সী হাফেজ আবদুল্লাহ আল মামুন। সৌদি সরকারের ধর্ম মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে হাইয়্যাতুল আলামিয়্যাহ নামের একটি সংস্থা এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। বিশ্বের ৭০টি দেশের প্রায় সাত হাজার প্রতিযোগীকে পেছনে ফেলে মামুন হয়েছেন প্রথম। মামুন কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার বাসিন্দা।
২০১৪ সালের রমজান মাসে শুরু হয় এ প্রতিযোগিতা। মামুন পুরস্কার হিসেবে পেয়েছেন ১৮ হাজার রিয়াল। মামুনের হাতে পুরস্কার তুলে দেন মক্কার আমির আবদুল্লাহ বিন আবদুল আজিজ।
মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ: ‘বাদশাহ আবদুল আজিজ আন্তর্জাতিক কোরআন প্রতিযোগিতা’ বিশ্বের নামকরা একটি প্রতিযোগিতা। এ প্রতিযোগিতাটি অনুষ্ঠিত হয় পবিত্র মক্কা শরিফে। ২০১৩ সালে এ প্রতিযোগিতার দ্বিতীয় ক্যাটাগরিতে প্রথম স্থান অধিকার করেছে বাংলাদেশি মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ। কালাম পুরস্কার হিসেবে পেয়েছে ৮০ হাজার সৌদি রিয়াল। প্রতিযোগিতায় ৬১টি দেশের ১৫০ জন প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করেছিল।
হাফেজ মহিউদ্দিন: ২০১২ সালের আগস্টে আলজেরিয়ায় অনুষ্ঠিত হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের হাফেজ মহিউদ্দিন ৬০টি দেশের মধ্যে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন।
অন্ধ হাফেজ তানভির: ২০১২ সালের ডিসেম্বরে সৌদি আরবে অনুষ্ঠিত বিশ্ব হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতায় ৭৩টি দেশের মধ্যে ৩০ পারা গ্রুপে অন্ধ হাফেজ মুহাম্মদ তানভির প্রথম স্থান লাভ করে। ওই একই প্রতিযোগিতায় ১০ পারা গ্রুপে সাদ সুরাইল নামের অপর এক ক্ষুদে বাংলাদেশি হাফেজ প্রথম স্থান অধিকার করেন।
আসলে সবধরনের রেকর্ডই যে কোনো দেশের জন্য সুখকর। এভাবে বছরের পর বছর বিশ্বব্যাপী অনুষ্ঠিত বিভিন্ন আন্তর্জাতিক হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হওয়া বাংলাদেশের জন্য একটি বিরল অর্জনও বটে। এই অর্জনের মাধ্যমে বাংলাদেশ যেমন বিশ্বব্যাপী সম্মানিত হয়েছে, তেমনি স্থান করে নিয়েছে বিশ্ব রেকর্ড বুকে। অর্জিত হয়েছে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি। আমার চাই বাংলাদেশি হাফেজদের এমন সফলতার অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকুক। আরও বেশি বেশি সম্মান বয়ে আনুক। উজ্জ্বল করুক দেশের নাম।

Main-link 

নেয়ামতের শুকরিয়া আদায়ের সর্বোত্তম উপায়

নেয়ামতের শুকরিয়া আদায়ের সর্বোত্তম উপায়


প্রশ্ন : আল্লাহ্সুবহানাহু ওয়া তাআলা আমাদেরকে অসংখ্য নেয়ামত দিয়ে ধন্য করেছেন আমাদের প্রতি তাঁর এই সকল নেয়ামতের শুকরিয়া আদায়ের সর্বোত্তম উপায় কী?



প্রথমত :

ধন্যবাদ বা কৃতজ্ঞতা জানানোর উদ্দেশ্য হলো কারও উপকার এবং সদয় আচরণের প্রতিদান স্বরূপ তার প্রশংসা করা এবং তার প্রতিও সদয় আচরণ করা। মানুষের ধন্যবাদ এবং প্রশংসা পাওয়ার সবচেয়ে যোগ্য সত্ত্বা হলেন আল্লাহ্সুবহানাহু ওয় তাআলা। কারণ জাগতিক এবং আধ্যাত্মিক উভয় ক্ষেত্রেই তিনি আমাদেরকে অসংখ্য অনুগ্রহের মাধ্যমে ধন্য করছেন। এইসব নেয়ামতের জন্য তিনি আমাদেরকে তার প্রশংসা করার এবং সেগুলোকে অস্বীকার না করার নির্দেশ দিয়েছেন।  

অতএব, তোমরা আমাকে স্মরণ করো, আমি তোমাদেরকে স্মরণ করব। আর আমার শোকর আদায় করো, আমার সাথে কুফরী কোরো না।” [আল-বাকারা; : ১৫২]

দ্বিতীয়ত :                       

যারা আল্লাহ্ এই নির্দেশের আনুগত্য করেছেন এবং তাঁর যোগ্য শোকরকারী বান্দা বলে বিবেচিত হওয়া পর্যন্ত তাঁর প্রশংসা করেছেন গেছেন, তারা হলেন নবী এবং রাসূলগণ (‘আলাইহিমুস সালাম)

আল্লাহ্তাআলা বলেন:

নিশ্চয়, ইবরাহীম ছিলেন (একাই) এক উম্মত (একটি জাতির জীবন্ত প্রতীক), আল্লাহ্ একান্ত অনুগত, একনিষ্ঠ। তিনি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না। তিনি ছিলেন তার রবের নেয়ামতের শোকরকারী। তিনি তাকে বাছাই করেছেন এবং তাকে সঠিক পথে পরিচালিত করেছিলেন।”  [সূরা নাহল; ১৬ : ১২০-১২১]

সে তাদের বংশধর, যাদেরকে আমি নূহের সাথে আরোহণ করিয়েছিলাম, নিশ্চয় তিনি ছিলেন কৃতজ্ঞ বান্দা।”  [সূরা বনী ইসরাইল; ১৭ : ]

তৃতীয়ত :

আল্লাহ্তাআলা কুরআনে আমাদের প্রতি তাঁর কিছু নেয়ামতের কথা উল্লেখ করেছেন এবং সেসব জন্য আমাদেরকে শুকরিয়া আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি আমাদেরকে কথাও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যে, খুব অল্প কিছু মানুষই তাঁর নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করে থাকে

আল্লাহ্তাআলা বলেন:

হে মুমিনগণ! আমি তোমাদেরকে যে হালাল রিযিক দিয়েছি তা থেকে আহার করো এবং আল্লাহ্ জন্য শোকর করো যদি তোমরা তাঁরই ইবাদত করো।” 
[সূরা বাকারা; : ১৭২]

আর অবশ্যই আমি তো তোমাদেরকে যমীনে প্রতিষ্ঠিত করেছি এবং তাতে তোমাদের জন্য রেখেছি জীবনোপকরণ। তোমরা খুব কমই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে থাকো।” 
[সূরা আরাফ; : ১০]

আর তাঁর নির্দেশনসমূহের মধ্যে রয়েছে, তিনি [বৃষ্টির] সুসংবাদ বহনকারী হিসেবে বাতাস প্রেরণ করেন এবং যাতে তিনি তোমাদেরকে তাঁর রহমত আস্বাদন করাতে পারেন এবং যাতে তাঁর নির্দেশে নৌযানগুলো চলাচল করে, আর যাতে তোমরা তাঁর অনুগ্রহ থেকে কিছু সন্ধান করতে পারো। আর যাতে তোমরা কৃতজ্ঞ হও।[সূরা রুম; ৩০ : ৪৬]

 আল্লাহ্তাআলা কুরআনে যেসব আধ্যাত্মিক নেয়ামতের উল্লেখ করেছেন সেগুলো হলো        
হে মুমিনগণ! যখন তোমরা সালাতে দণ্ডায়মান হতে চাও, তখন তোমাদের মুখ এবং কনুই পর্যন্ত হাত ধৌত করো, মাথা মাসেহ করো এবং টাখনু পর্যন্ত পা (ধৌত করো) আর যদি তোমরা অপবিত্র থাকো, তবে ভালোভাবে পবিত্র হও। আর যদি অসুস্থ হও কিংবা সফরে থাকো অথবা যদি তোমাদের কেউ পায়খানা থেকে আসে অথবা তোমরা যদি স্ত্রী সহবাস করো অতঃপর পানি না পাও, তবে পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করো। সুতরাং তোমাদের মুখ হাত তা দ্বারা মাসেহ করো। আল্লাহ্তোমাদের উপর কোন সমস্যা সৃষ্টি করতে চান না। বরং তিনি তোমাদের পবিত্র করতে চান এবং তোমাদের উপর তাঁর নেয়ামত পূর্ণ করতে চান, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো।” [সূরা মায়েদা; : ]



রয়েছে আরও অনেক অফুরন্ত নেয়ামত। আমরা এখানে সেগুলো থেকে মাত্র কয়েকটা উল্লেখ করলাম। বলাই বাহুল্য যে, আল্লাহ্ সমস্ত নেয়ামতের তালিকা করা অসম্ভব। এই মর্মে আল্লাহ্তাআলা বলেন:

আর তোমরা যা চেয়েছ, তার প্রত্যেকটি থেকে তিনি তোমাদেরকে দিয়েছেন এবং যদি তোমরা আল্লাহ্ নেয়ামতের গণনা করো, তবে তার সংখ্যা নিরূপণ করতে পারবে না। নিশ্চয় মানুষ অতিমাত্রায় যালিম, অকৃতজ্ঞ।” [সূরা ইবরাহীম; ১৪ : ৩৪]

আমরা আল্লাহ্ নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করলে তিনি আমাদের ত্রুটিবিচ্যুতিকে ক্ষমা করে দেবেন এবং আমাদের প্রতি করুনা করবেন। এই মর্মে তিনি বলেন:

আর যদি তোমরা আল্লাহ্ নেয়মত গণনা করো, তবে তার ইয়ত্তা পাবে না। নিশ্চয় আল্লাহ্ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” [সূরা নাহল; ১৬ : ১৮]

 আল্লাহ্না চাইলে, কেউ তাঁর প্রশংসা করতে পারে না। তাই মুসলিমরা সর্বদাই আল্লাহ্ কাছে সাহায্য চেয়ে প্রার্থনা করে, যেন তিনি তাদেরকে তাঁর নেয়ামতের শুকরিয়া করার সামর্থ্য দান করেন। একারণেই বিশুদ্ধ হাদীসে আল্লাহ্ প্রশংসা করার জন্য তাঁর সাহায্য চেয়ে দো করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে

মুআয ইবনু জাবাল (রা) বর্ণনা করেন যে, আল্লাহ্ রাসুল (সা) তার হাত ধরে বললেন :

 হে মুআয! আল্লাহ্ কসম, তোমাকে আমি ভালবাসি, আল্লাহ্ কসম, আমি তোমাকে ভালোবাসিতারপর তিনি বললেন, “হে মুআয! আমি তোমাকে উপদেশ দিচ্ছি  যে, প্রত্যেক সালাতের শেষে তুমি বলতে ভুলে যাবে না : হে আল্লাহ্‌! তোমাকে উত্তমরূপে স্মরণ করার, তোমার শুকরিয়া করার এবং তোমার ইবাদত করার জন্য আমাকে সাহায্য করো।” [আবু দাউদ (১৫২২) এবং নাসা কর্তৃক সংকলিত; সহীহ আবি দাউদে আল-আলবানি হাদীসটি সহীহ বলে মত দিয়েছেন]

 আল্লাহ্ নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করলে, আমরা তাঁর পক্ষ থেকে আরও বেশী নেয়ামত প্রাপ্ত হবো। এই মর্মে আল্লাহ্তাআলা বলেন:

আর যখন তোমাদের রব ঘোষণা দিলেন, ‘যদি তোমরা শুকরিয়া আদায় করো, তবে আমি অবশ্যই তোমাদের বাড়িয়ে দেবো, আর যদি তোমরা অকৃতজ্ঞ হও, নিশ্চয় আমার আযাব বড় কঠিন।’ ” [ইবরাহীম; ১৪ : ]

চতুর্থত :

মানুষ কীভাবে তার প্রতিপালকের দেওয়া নেয়ামতরাজির শুকরিয়া আদায় করবে? আল্লাহ্ শুকরিয়া আদায়ের ক্ষেত্রে সবগুলো নির্ধারিত শর্তসমূহ পূর্ণ করা অপরিহার্য। যেমন : অন্তরের শুকরিয়া, জিহ্বার শুকরিয়া এবং অন্য সকল শারীরিক ক্ষমতার শুকরিয়া

ইবনুল কাইয়্যিম () বলেন :

অন্তরের শুকরিয়া হলো আত্মসমর্পণ এবং বিনম্রতায়; জিহ্বার শুকরিয়া হলো প্রশংসা এবং স্বীকারোক্তিতে; আর শারীরিক ক্ষমতার শুকরিয়া হলো আনুগত্য এবং বশ্যতায়।” [মাদারিজ আল-সালিকীন (/২৪৬)]

উল্লিখিত বিষয়গুলোর বিশ্লেষণ :

. অন্তরের শুকরিয়া : এর অর্থ হলো, আল্লাহ্তাঁর বান্দার প্রতি যে অনুগ্রহ করেছেন, অন্তর সেই অনুগ্রহসমূহকে পূর্ণ গুরুত্বের সাথে উপলব্ধি করে এবং দ্বিধাহীন চিত্তে স্বীকার করে যে, কেবল আল্লাহ্ তাকে এইসব অনুগ্রহ দান করেছেন যার কোনো শরীক বা অংশীদার নেই। আল্লাহ্তায়ালা বলেন:

 আর তোমাদের কাছে যেসব নেয়ামত আছে তা আল্লাহ্ পক্ষ থেকে” 
[আন-নাহল; ১৬ : ৫৩]

 আমরা সমস্ত নেয়ামত যে আল্লাহ্ পক্ষ থেকে পাই, তা স্বীকার করা কেবল মুস্তাহাব (উৎসাহিত) নয়; বরং তা ফরয (বাধ্যতামূলক) এইসব নেয়ামত আল্লাহ্ছাড়া অন্য কারও পক্ষ থেকে এসেছে বলে বিশ্বাস করলে তা হবে কুফরী

শায়েখ আব্দুর রাহ্মান আস-সাদি () বলেছেন :

মানুষকে পরিপূর্ণভাবে স্বীকার করতে হবে যে, সমস্ত নেয়ামতরাজি আল্লাহ্ পক্ষ থেকে। তবেই সে পরিপূর্ণভাবে তাওহীদ-কে অর্জন করবে। যে কেউ মুখে বা অন্তরে আল্লাহ্ নেয়ামতসমূহকে অস্বীকার করবে, সে একজন কাফির এবং ইসলামের সাথে তার কোনো সম্পর্ক নেই

 যে দৃঢ়ভাবে অন্তরে বিশ্বাস করে যে, সকল নেয়ামত শুধুমাত্র আল্লাহ্ পক্ষ থেকে, আবার কখনও কখনও সেগুলোকে আল্লাহ্ পক্ষ থেকে, কখনও নিজের কর্ম বা অন্যের প্রচেষ্টার ফসল মনে করেযেমনটি অনেক মানুষের মুখে শোনা যায়তাহলে তাকে তাওবা করতে হবে এবং সমস্ত নেয়ামতসমূহ তার সৃষ্টিকর্তা ছাড়া অন্য কারও পক্ষ থেকে বলে মনে করবে না এবং সে অবশ্যই নিজেকে দিয়ে তা (তাওবা) করাবে। কারণ আল্লাহ্ নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় না করে, ঈমান এবং তাওহীদ অর্জন করা যায় না

ঈমানের মূলকথাই হলো আল্লাহ্ শুকরিয়া আদায় করা যা তিনটি স্তম্ভের উপর প্রতিষ্ঠিত :  
বান্দার প্রতি আল্লাহ্ সমস্ত নেয়ামতকে অন্তরে স্বীকার করা এবং সেগুলো সম্পর্কে আলোচনা করা; আল্লাহ্ শুকরিয়া আদায় করা; এবং এই শুকরিয়াকে কাজে লাগিয়ে একমাত্র আল্লাহ্ ইবাদত এবং আনুগত্য করা যিনি সমস্ত নেয়ামতের যোগানদাতা। 
 [আল-কাওল আস্‌-সাদীদ ফী মাকাসিদুত তাওহীদ (পৃষ্ঠা ১৪০)]

যারা তাঁর নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করে না, তারা কোন ধরণের মানুষ, সে সম্পর্কে আল্লাহ্তাআলা বলেন:

তারা আল্লাহ্ নেয়ামত চেনে, তারপরও তা অস্বীকার করে, আর তাদের অধিকাংশই কাফির। [সূরা নাহল; ১৬ : ৮৩]

ইবনু কাসির () বলেছেন :  তারা তো নিজেরাই জানে যে, একমাত্র আল্লাহ্তাআলাই হচ্ছেন নিয়ামতরাজি দানকারী। কিন্তু এটা জানা সত্ত্বেও তারা এগুলো অস্বীকার করছে এবং তারা অন্যদের ইবাদত করছে। এমনকি তারা মনে করছে যে, সাহায্যকারী অমুক, আহার্যদাতা অমুক।” 
[তাফসীর ইবনু কাসির (/৫৯২)]

. মুখের শুকরিয়া : এর অর্থ হলো, সমস্ত নেয়ামত রাজি শুধুমাত্র আল্লাহ্ পক্ষ থেকেএকথা অন্তরে বিশ্বাস করার পর, তা মৌখিকভাবে স্বীকার করা এবং নিজের জিহ্বাকে সর্বদায় আল্লাহ্সুবহানাহু ওয়া তাআলা প্রশংসায় নিয়োজিত রাখা

তাঁর বান্দা মুহাম্মাদের (সা) প্রতি তাঁর নেয়ামতের কথা উল্লেখ করে আল্লাহ্তাআলা বলেন :

তিনি তোমাকে পেয়েছেন নিঃস্ব। অতঃপর তিনি সমৃদ্ধ করেছেন।” 
[সূরা আদ-দুহা; ৯৩ : ]

 আল্লাহ্ এই নেয়ামতের জন্য রাসূলকে কী করতে হবে, তা আল্লাহ্তাআলা মনে করিয়ে দিয়ে বলেন :

আর তোমার রবের অনুগ্রহ তুমি বর্ণনা করো।” [সূরা আদ-দুহা; ৯৩ : ১১]



উল্লিখিত আয়াতের ব্যাখ্যা ইবনু কাসির () বলেছেন :   
যখন আপনি নিঃস্ব এবং অভাবগ্রস্থ ছিলেন, আল্লাহ্তখন আপনাকে সমৃদ্ধ এবং অভাবমুক্ত করেছেন করেছেন : তাই আপনার প্রতি অনুগ্রহের কথা ঘোষণা করুন।”    [তাফসীর ইবনু কাসির (/৪২৭)]


 আনাস ইবনু মালিক থেকে বর্ণিত। আল্লাহ্ রাসূল (সা) বলেছেন : 
আল্লাহ্সেই ব্যক্তির প্রতি খুশি হন, যে কোনো খাবার খাওয়ার পরে তাঁর প্রশংসা করে অথবা যে কোনো পান করার পরে তাঁর প্রশংসা করে।” [সহীহ্মুসলিম (২৭৩৪)]

আবুলআব্বাস আল-কুরতুবি () বলেছেন :উল্লিখিত হাসীসে প্রশংসা বলতে শুকরিয়া আদায় করাকে বোঝানো হয়েছে। আমরা দেখেছি যে, প্রশংসার মাধ্যমে শুকরিয়া হতে পারে কিন্তু শুকরিয়ার মাধ্যমে প্রশংসা নাও হতে পারে। নেয়ামত সংখ্যায় যত ক্ষুদ্রই হোক না কেন, তার জন্য শুকরিয়া আদায় করাই হলো আল্লাহ্তাআলা সন্তুষ্টি অর্জনের সর্বোত্তম উপায় যা জান্নাতের অধিবাসীদের সবচেয়ে মহান বৈশিষ্ট্য। যখন জান্নাতীরা বলবে, “আপনি আমাদেরকে এমন কিছু দিয়েছেন যা সৃষ্টির মধ্যে অন্য কাউকে দেননি,” তখন আল্লাহ্তাদের উদ্দেশে বলবেন : “আমি কি তোমাদেরকে তার চেয়েও অধিক উত্তম কিছু দেবো না?”  তারা বলবেসেটা কী? আপনি কি আমাদের মুখমণ্ডলগুলোকে উজ্জ্বল করেননি এবং আমাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাননি এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি রক্ষা করেননি? তিনি বলবেন, তোমাদের প্রতি আমি সন্তুষ্ট হয়ে গেলাম এবং এরপর আর কখনোও তোমাদের প্রতি রাগান্বিত হবো না।

 এই বিরাট সম্মান অর্জনের উপায় হলো শুরিয়া আদায় করা। কারণ নেয়ামতের শুকরিয়া আদায়ের মাধ্যমে শুধুমাত্র আল্লাহ্কেই ওই নেয়ামতের সৃষ্টিকর্তা হিসেবে স্বীকার করা হয়। যিনি নেয়ামতসমূহকে সম্মান অনুগ্রহস্বরূপ তাঁর বান্দার নিকট পৌঁছে দেন। যে বান্দা নিঃস্ব এবং অসহায় এবং যে অনুগ্রহ ছাড়া চলতে পারে না। কাজেই শুকরিয়া আদায় করাটা আল্লাহ্ হক্ব এবং আমাদের প্রতি তাঁর অনুগ্রহের স্বীকৃতি। এই স্বীকৃতি দেওয়া বান্দার অত্যাবশ্যক কর্তব্য। একারণেই আল্লাহ্তাঁর শুকরিয়া আদায়ের পুরস্কারকে এত সম্মানজনক করেছেন।
  [আল-মুফহিম লিমা আশকালা মিন তালখীস কিতাব মুসলিম (/৬০,৬১)]

  কারনে সালাদের কেউ কেউ বলেছেন : কেউ কোনো নেয়ামতের কথা গোপন করলে সে ওই নেয়ামতকে অস্বীকার করল, আর কোনো নেয়ামতের কথা প্রকাশ করলে সে ওই ওটার জন্য শুকরিয়া আদায় করলো

কথার মন্তব্যে ইবনুল কায়্যিম () বলেছেন :“আল্লাহ্যখন কোনো ব্যক্তির প্রতি অনুগ্রহ করেন, তিনি ওই বান্দার উপর সেই অনুগ্রহের প্রভাব দেখতে ভালোবাসেন।” [মাদারিজি আল সালেকিন (/২৪৬)]

উমার ইবনু আব্দুল আযীয () থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন : (আল্লাহ্) নেয়ামতের কথা পরস্পরকে স্মরণ করিয়ে দাও। কারণ সেগুলো আলোচনা করাও হলো শুকরিয়া আদায় করা

 . শারীরিক ক্ষমতার শুকরিয়া : এর অর্থ হলো শারীরিক ক্ষমতাকে আল্লাহ্ আনুগত্যের জন্য ব্যবহার করা এবং সেগুলোকে সবধরণের পাপাচার এবং আল্লাহ্ বিরুদ্ধাচরণ থেকে দূরে সরিয়ে রাখা যেসব কাজ আল্লাহ্নিষিদ্ধ করেছেন

আল্লাহ্তাআলা বলেন:

    “হে দাউদ পরিবার, তোমরা কৃতজ্ঞতাস্বরূপআমল করে যাও।” [সূরা সাবা; ৩৪ : ১৩]


 ‘ আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত : “আল্লাহ্ রাসুল (সা) যখন সালাত আদায় করতেন, তিনি এত দীর্ঘ সময় ধরে দাঁড়িয়ে থাকতেন যে, তাঁর পা দুটো ফুলে যেতো।আয়েশা (রা) বললেন : হে আল্লাহ্ রাসুল! আপনি এমনটি করছেন যখন আল্লাহ্আপনার অতীত ভবিষ্যতের গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দিয়েছেন? তিনি বললেন : “হে আয়েশা! আমি কি শোকর গুজারি বান্দা হবো না?” 
[আল-বুখারি (৪৫৫৭) এবং মুসলিম (২৮২০)]


ইবনু বাত্তল (রা) বলেছেন :আত-তাবারি বলেছেন : এব্যাপারে বিশুদ্ধ মত হলো, শুকরিয়ার মাধ্যমে প্রমাণিত হয় যে, ওই নেয়ামত আল্লাহ্ছাড়া অন্য কারও পক্ষ থেকে নয় এবং কাজের (শুকরিয়ার) মধ্য দিয়েই তার প্রমাণ এবং যেহেতু শুকরিয়া আদায় করা হয়েছে তাই সেটা প্রমাণিত। তবে প্রমাণিত হওয়ার পর ব্যক্তির কাজকর্ম যদি ভিন্নরূপ দেখা যায়, তাহলে সে নিজেকে শোকরকারী বলার যোগ্য নয়। একে মৌখিক শুকরিয়া বলা যেতে পারে। একথা যে সত্য, তার প্রমাণ হলো আল্লাহ্তাআলা বাণী:
হে দাউদ পরিবার, তোমরা কৃতজ্ঞতাস্বরূপআমল করে যাও।” [সূরা সাবা; ৩৪ : ১৩]  
এটি জানা কথা যে, আল্লাহ্যখন তাদের প্রতি তাঁর নেয়ামতের জন্য শুকরিয়া আদায় করতে বলেছিলেন, তখন তিনি তাদেরকে শুধু মুখেই ওকথা স্বীকার করার জন্য আদেশ করেননি। কারণ তাদের প্রতি নেয়ামতসমূহ আল্লাহ্ দেওয়া একথা তারা অস্বীকার করেনি। বরং তিনি তাদেরকে আনুগত্যপূর্ণ আচরণের মাধ্যমে তাঁর নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করার হুকুম দিয়েছিলেন। ঠিক কারণেই, রাতে সালাত আদায় করার সময় যখন রাসূলের (সা) পা দুটো ফুলে যেতো, তখন তিনি বলতেন
  আমি কি শোকর গুজারি বান্দা হবো না? [সহীহ্আল-বুখারি (১০/১৮৩,১৮৪)]

আবু হারুন বলেন : হঠাৎ আবু হাজিমের সাথে আমার দেখা হলো। আমি বললাম : আল্লাহ্আপনার উপর দয়া করুন, চোখের শুকরিয়া কী? তিনি বললেন : আপনি তাদের (দুচোখ) মাধ্যমে ভালো কিছু দেখলে তা প্রকাশ করুন। আর তাদের মাধ্যমে মন্দ কিছু দেখলে তা গোপন করুন। আমি বললাম : কানের শুকরিয়া কী? তিনি বললেন : আপনি তাদের (দুই কান) মাধ্যমে ভালো কিছু শুনলে তা মনে রাখুন। আর তাদের মাধ্যমে মন্দ কিছু শুনলে তা ভুলে যান

ইবনু রাজাব আল হানবালি () বলেন :

শুকরিয়া দুই ধরনের হয়ে থাকে। একটি হলো ফরয (বাধ্যতামূলক) অর্থাৎ ফরয কাজগুলো সম্পাদন করা এবং নিষিদ্ধ কাজগুলো বর্জন করা। এমনটি করা অত্যাবশ্যক এবং শুকরিয়া আদায়ের জন্য এমনটি করাই যথেষ্ট

একারণেই একজন সালাফের মতে :

শুকরিয়া হলো পাপ কাজ ত্যাগ করা।

সালাফদের আরেকজন বলেছেন :

শুকরিয়া হলো কোনো নিয়ামত ব্যবহার করে তাঁর (আল্লাহ্) বিরুদ্ধাচরণ না করা

 আবু হাজিম আল-যাহিদ সবধরনের শারীরিক ক্ষমতার শুকরিয়া সম্পর্কে উল্লেখ করেছেন : এগুলোকে (শারীরিক ক্ষমতাগুলোকে) পাপ থেকে বাঁচিয়ে রাখা এবং এগুলোর ব্যবহার করে আল্লাহ্ প্রতি আনুগত্য করতে কাউকে সাহায্য করা। অতঃপর তিনি বলেন : যে ব্যক্তি তার জিহ্বা দিয়ে শুকরিয়া করে কিন্তু বাকি শারীরিক ক্ষমতা দিয়ে করে না, তার অবস্থা ওই লোকের মতো, যার একটা আলখাল্লা আছে কিন্তু সে তা গায়ে না দিয়ে, হাতে ধরে নিয়ে বেড়ায়। ফলে শীতে, গরমে , তুষারে বা বৃষ্টিতে ওই আলখাল্লা তার কোনো উপকারেই আসে না

দ্বিতীয় প্রকার শুকরিয়া হলো মুস্তাহাব।  
কোনো ব্যক্তি এই কাজগুলো ফরজ ইবাদত করার পর এবং নিষিদ্ধ বিষয়সমূহ পরিত্যাগ করার পর, অতিরিক্ত বা নফল ইবাদত হিসেবে করে থাকে। শুকরিয়া আদায়ের এই স্তরটি তাদের, যারা সৎকর্মে অগ্রগামী এবং আল্লাহ্  তাআলা অধিক নৈকট্যলাভকারী।
  [জামিউলউলুম য়াল হুকাম (পৃষ্ঠা ২৪৫, ২৪৬)

সারকথা :

আল্লাহ্ নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করতে চাইলে, আপনাকে অবশ্যই অন্তরে স্বীকার করতে হবে যে, সমস্ত অনুগ্রহ এবং নেয়ামতের যোগানদাতা হলেন শুধুমাত্র আল্লাহ্ এই আন্তরিক স্বীকারোক্তির ফলে আপনি আল্লাহ্কে শ্রদ্ধা এবং ভক্তির সাথে ভালবাসতে পারবেন। আপনি মুখ দিয়ে স্বীকার করবেন, তিনিই হলেন একমাত্র অনুগ্রহকারী। অতএব, ঘুম থেকে জেগে উঠেই আপনি তার প্রশংসা করবেন। কারণ তিনি আপনাকে নতুন জীবন দান করেছেন। পানাহার করার পরে তাঁর প্রশংসা করবেন। কারণ তিনি অনুগ্রহ করে আপনাকে খাইয়েছেন এবং পান করিয়েছেন। আর এভাবে প্রতিটি অনুগ্রহের জন্য তাঁর শুকরিয়া আদায় করবেন

আপনি শারীরিক ক্ষমতার মাধ্যমে শুকরিয়া আদায় করবেন। চোখ দিয়ে মন্দ কিছু দেখবেন না। কান দিয়ে গান বাজনার মতো খারাপ কিছু শুনবেন না। পায়ে হেঁটে নিষিদ্ধ স্থানে যাবেন না। হাত দিয়ে কোনো পাপ কাজ করবেন না। যেমন : কোনো নিষিদ্ধ প্রেমপত্র বা নিষিদ্ধ চুক্তি লিখবেন না। শারীরিক ক্ষমতা দ্বারা শুকরিয়া করার মধ্যে রয়েছে কোরআন পড়া, জ্ঞান বাড়ে এমন বই পড়া , উপকারী প্রয়োজনীয় জিনিস শোনা এছাড়া অন্য সকল ক্ষমতা বিভিন্ন ইবাদাত এবং আনুগত্যের কাজে ব্যবহার করা উচিত

মনে রাখবেন, আল্লাহ্ নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করতে পারাটাও তাঁর পক্ষ থেকে আরেকটি নেয়ামত এবং এজন্যও শুকরিয়া আদায় করতে হবে। ফলে শোকরকারী যতই আল্লাহ্ শুকরিয়া আদায় করে, ততই আল্লাহ্ নেয়ামত উপভোগ করে অনুগ্রহপ্রাপ্ত হয়

আমরা দো করি আল্লাহ্যেন আপনাকে আমাকে এবং সর্বোপরি সবাইকে তা- করার তাওফীক দান করেন যা তিনি ভালোবাসেন এবং পছন্দ করেন

সূত্র : www.Islamqa.info

Peace Be Upon You

Peace Be Upon You